আপনি কি জানেন?
আত্নীয় বা পরিচিত কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে জনেজনে ফোন করে বা ফেসবুকে পোস্ট করে রক্ত খুজার ভোগান্তির অবসান করতে আমাদের এই উদ্যোগ। আমরা আপনাদের কঠিন সময়কে কিছুটা সহজ করতে কাজে নেমেছি। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমরা দেশের সকল জেলার সকল গ্রুপের রক্তদাতার তথ্য সংগ্রহ করে রাখছি যাতে করে যে কেউ খবই সহজেই এবং স্বপ্ল সময় ব্যয়ে তাদের জরুরি গ্রপের রক্ত সঠিক সময়ে পেতে পারে। “রক্তের অভাবে যেন নাহি যায় আরও একটি প্রাণ” এই প্রত্যাশায় আমাদের এই যাত্রা শুরু। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বাচাতে চাই হাজারো মানুষকে কেন রক্তদান জরুরি? প্রতিদিন হাজারো মানুষ মারা যায় শুধুমাত্র রক্তের অভাবে। হাজারো মানুষের চোখের জল ঝড়ে আপন হারানোর ব্যাথায়। আপনার রক্ত যদি কিছু মানুষকে নতুন জীবন দিতে পারে তবে কেন নয়?
…”রক্তদান ঐচ্ছিক বিষয় নয়, এটি দায়িত্বের চেয়েও বেশি কিছু”…
কেন রক্তদান করবেন?
১. নিয়মিত রক্তদানের ফলে আপনার ব্লাড প্রেশার এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে।
২. রক্তদানের মাধ্যমে কাউকে সাহায্য করার ফলে হতাশাজনিত রোগের প্রবণতা কমে।
৩. নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে নিজের শরীরে বড় কোনো রোগ আছে কিনা জানা যায়।
৪. নিজের শারীরিক অবস্থা ও মন প্রফুল্ল থাকে।
৫. দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুন বেড়ে যায়।
কারা রক্তদান করতে পারবেন না?
১. ১৮ বছরের নিচের কেউ।
২. আগের রক্তদানের ৪ মাসের ব্যবধান না থাকলে।
৩. আপনার কোনো চর্মরোগ থাকলে।
৪. আপনি যদি হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইচএইভি, ক্যান্সার, যক্ষা ম্যালেরিয়া রোগ মুক্ত হতে হবে।
৫. আপনি যদি সম্প্রতি মাদক গ্রহণ করে থাকেন তাহলে।
৬. নারীদের ক্ষেত্রে যারা গর্ভবতী এবং যাদের মাসিক চলছে ।
৭. আপনার যদি হঠাৎ করে ৬ মাসের মধ্যে ৫কেজির বেশি ওজন কমে যায় তাহলে।
রক্তদান নিয়ে কিছু ভুল তথ্য:
১. রক্ত দান করার সময় ব্যথা লাগে। এই কথাটা বেশির ভাগ মানুষকে বলতে শুনা যায় যা সম্পূর্ণরূপে ভুল কথা। একটা ইনজেশন দিতে যেমন ব্যথা লাগে তেমনই শুধু সূই ফুটানোর সময় লাগে। এরপর থেকে রক্তদান সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যথা লাগে না।
২. রক্তদানের পর স্বাস্থ্য খারাপ অবনতি হয়। অনেকের মতে রক্তদান করলে ব্লাড প্রেসার কমে যায়,যা ভুল কথা। উল্টো রক্তদানের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং দেহে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন বা লৌহ সঞ্চয় প্রতিরোধ করে।
৩. ওষুধ সেবন করলে রক্তদান করা যাবে না। নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ (Anticoagulants, Anti-platelet Medications) সেবন করলে রক্তদান করা যায়। অন্যথায়, অন্য কোনো ওষুধের সাথে রক্তদান না করার কোনো সম্পর্ক নেই।
৪. আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের কাজ বা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি, এর মধ্যে সময় বের করে রক্তদানের জন্য যাওয়াটা মুশকিল মনে অনেকের কাছে। কারন অনেকেই ভাবে রক্তদানে ৩/৪ ঘন্টা লেগে যায় যা সত্য নয়। রক্তদানে ৮-১০ মিনিটের বেশী লাগে না। আমাদের জীবন থেকে যদি ৮-১০ মিনিট দিয়ে কারও জীবন বাচাতে পারি তবে ক্ষতি কি?
৫. কোনো ইনফেকশন হওার সম্ভবনাঃ রক্ত নিয়ার সময় ডাক্তার বা নার্সরা একদম নতুন সুই ব্যবহার করে,ফলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভবনা থাকে না।
৬. আপনার High Cholesterol থাকলে রক্ত দিতে পারবেন না। Have High Cholesterol রক্তদানের কোন বাধা দেয় না। এইটি ভুল ধরনা।
৭. ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবে না। এটিও ভুল তথ্য। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্ত দান করতে পারবে, যতক্ষণ ওই ব্যক্তির রক্তের গ্লুকোজ লেভেল সঠিক সীমার মধ্যে থাকবে।
৮. উচ্চরক্তচাপের কারণে রক্তদান করা যায় না এইটি আরেকটি ভুল তথ্য। আপনার ব্লাড প্রেসার যদি ১৮০সিষ্টোলিক ও ১০০ডায়াষ্টোলিকের মাঝে থাকে তবে আপনি রক্তদান করতে পারবেন।
রক্তদাতাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা:
১. রোগী যদি তাদের নিজস্ব বাসায় ডাকে তবে যাবেন না। শুধুমাত্র হাসপাতাল/ক্লিনিকে রক্তদানের জন্য যাবেন।
২. হাসপাতাল/ক্লিনিক ছাড়া অন্য কোথাও রক্ত চাওয়া ব্যক্তির এর সাথে দেখা করতে যাবেন না। শুধু হাসপাতালেই দেখা করবেন।
৩. রক্তদানের পূর্বে রোগীর রিপোর্ট, ডাক্তারের রিকুইজিশন লেটার, রোগীর সমস্যা দেখে শুনে নিবেন।
৪. রক্তদানের সময় দুই-একজন বন্ধু বা পরিচিত কিছু মানুষ নিয়ে যাবেন। যদি আপনার মাথা ঘুরালে আপনাকে তারা দেখে রাখতে পারে।
৫. রক্তদানে নতুন সূচ ব্যবহার করছে কিনা নিশ্চিত হয়ে তারপর রক্তদান করবেন। যাতে করে ইনফেকশনের ভয় না থাকে।
৬. উপস্থিত বিশেষজ্ঞের দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থাকলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
৭. সবসময় ক্রস ম্যাচিং করার পর রক্তদান করবেন। বেশীর ভাগ সরকারী হাসপাতালে ক্রস ম্যাচিং না করেই রক্ত নিয়ে নেয়।এটা কখনই উচিত নয়। নিজের এবং রোগীর ভালো জন্যে এইটা করে নিয়ে রক্ত দিবেন।
রোগীদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা:
১. রক্তদানের পর রক্তদাতা যাতে আধা ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে পারেন তার ব্যবস্থা করে রাখবেন।
২. রক্তদাতার সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।
৩. রক্তদানের পর অনেকেরই মাথা ঘুরে বা অস্বস্তি লাগে ।তাই রক্তদাতার জন্য পানি,সেলাইন ডাবের পানির ব্যবস্থা রাখবেন।
৪. সুস্থ হয়ে উঠার পরও রক্তদাতার সাথে যোগাযোগ রাখবেন। রক্তদাতা নিরসার্থ ভাবে আপনার জীবন বাচিয়েছে তাই তার খোজখবর রাখা আপনার কর্তব্য।